শিক্ষার্থীদের মোবাইল গেমস আসক্তি(পর্ব:২)
আফজাল হোসাইন মিয়াজী:
ডিজিটাল মাদক
অনেক অভিভাবক আফসোস করেন তার ছেলেটা আজকাল কেমন যেন হয়ে গেছে। বিষন্নতা ভর করছে। এই বিষন্নতা কোনো অসুখ নয়। তবে এটা এক রকমের নেশা। মাদকের চাইতেও বাজে নেশা। সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, ‘ক্লেশ অফ ক্লে’ নামক গেমস এবং আইফোন, স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তিগুলো এক রকমের ‘ডিজিটাল মাদক’।
সন্তানকে ডিজিটাল করতে গিয়ে এনড্রয়েড, আইফোন তুলে দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াটা মোটেই সঠিক কাজ নয়। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটাই এখন বেশি চোখে পড়ছে। সন্তান ভালো না থাকলে নিশ্চয় মা-বাবাও ভালো থাকতে পারে না। তাই এখনই সময় প্রযুক্তির প্রতি অতি আসক্তি দূর করতে হবে।
বিজ্ঞান বলছে, মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্স আমাদের নানাবিধ আবেগীয় কর্মকান্ডগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোকেন নামক মাদকটি এই ফ্রন্টাল কর্টেক্সকে বাজেভাবে প্রভাবিত করে। আর এই প্রযুক্তিগত পণ্যগুলো ঠিক কোকেনের মতোই আমাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সের চারপাশে ঘুরপাক খেতে থাকে।
এর ফলাফল এতটাই মারত্মক যে, প্রযুক্তিগুলোর সান্নিধ্যে থাকার সময় আমাদের শরীরে ডোপামিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ঠিক যতটা সময় শিশুরা প্রযুক্তির ধারে-কাছে থাকে ঠিক ততটা সময়ই তাদের মন-মেজাজ ভালো থাকে। বাকিটা সময় অস্থিরতা, অনাগ্রহ আর বিরক্তিতে ভুগতে থাকে তারা।
চিকিৎসকদের মতে, এটি এক ধরণের ‘ইলেকট্রনিক কোকেইন’। অন্যদিকে আমেরিকান নেভি এবং এডিকশন রিসার্চ ফর দ্যা পেন্টাগনের প্রধান ড. অ্যান্ড্রু ডোয়ানের মতে, এই প্রযুক্তিগুলো এক রকমের ডিজিটাল ফারমাকিয়া বা মাদকের অপর নাম।
তথ্যগুলো মোটেও মিথ্যে নয়। গেমস খেলায় নেশাগ্রস্থ আপনার শিশুর হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিন। দেখুন কেমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে সে। অনেক সময় গেমসের জগৎটাই শিশুর কাছে সবকিছু হয়ে পড়ে। ফলে বাস্তব জগতের ওপর থেকে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে শিশুরা। যা আগামী দিনের জন্য এক ভয়াবহ অশনি সংকেত। তাই এখনই সাবধান হোন। সন্তানকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যান। যেকোনো বাড়াবাড়ি থেকে দূরে রাখুন।
(চলবে)